২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১০:১০
নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ মার্কিন হামলা হয়েছে ট্রাম্পের নির্দেশে

নাইজেরিয়ার সরকারের অনুরোধে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস)–এর লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): নাইজেরিয়ার সরকারের অনুরোধে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামিক স্টেট (আইএস)–এর লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন সামরিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওই অঞ্চলে আইএস সদস্যরা মূলত খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল।


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলে, ‘আজ রাতে, কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। তারা নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে ভয়াবহভাবে হত্যা করছিল—যা বহু বছর, এমনকি শতাব্দীতেও দেখা যায়নি।’


মার্কিন সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) জানায়, নাইজেরিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সকোতো অঙ্গরাজ্যে এই হামলা চালানো হয় এবং এতে আইএসের একাধিক সদস্য নিহত হয়। আফ্রিকমের এক প্রাথমিক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, নাইজেরিয়ার অনুরোধেই হামলাটি চালানো হয়েছে, তবে পরে সেই পোস্টটি এক্স থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এই হামলার প্রেক্ষাপট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে, গত অক্টোবরের শেষ দিকে ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিল, দেশটিতে খ্রিষ্টধর্ম ‘অস্তিত্বগত হুমকির’ মুখে। ওই সময় সহিংসতা বন্ধে ব্যর্থ হলে নাইজেরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকিও দেয়। এরই মধ্যে বার্তাসংস্থা রয়টার্স সোমবার জানিয়েছে, নভেম্বরের শেষ দিক থেকে নাইজেরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে নজরদারি উড়োজাহাজ চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। এতে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও কৌশলগত সমন্বয়ের মাধ্যমে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মন্ত্রণালয় জানায়, এর ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিমান হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানা সম্ভব হয়েছে।

এদিকে পেন্টাগনের প্রকাশিত এক ভিডিওতে একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দৃশ্য দেখা যায়। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, আইএসের পরিচিত একাধিক ঘাঁটিতে অবস্থানরত সশস্ত্রদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্সে নাইজেরিয়া সরকারকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘আরও আসছে…।’

নাইজেরিয়া সরকার অবশ্য বলছে, দেশটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মুসলিম ও খ্রিষ্টান—উভয় সম্প্রদায়কেই লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তাদের মতে, শুধু খ্রিষ্টান নির্যাতনের ওপর জোর দেওয়া হলে দেশের জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নেওয়া উদ্যোগগুলো উপেক্ষিত হয়। তবে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে তারা সম্মত হয়েছে।

আফ্রিকার জনবহুল এই দেশটির উত্তরে মূলত মুসলিম এবং দক্ষিণে প্রধানত খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর বসবাস। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মসজিদে সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই অঞ্চলটিও দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের তৎপরতায় অস্থির।

এর আগে বড়দিন উপলক্ষে এক্সে দেওয়া বার্তায় নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু দেশের ভেতরে শান্তির আহ্বান জানায়, বিশেষ করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। বলে, ‘নাইজেরিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং খ্রিষ্টান, মুসলিমসহ সব নাগরিককে সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

বড়দিনের দিন ফ্লোরিডার পাম বিচে নিজস্ব মার-আ-লাগো ক্লাবে অবস্থানকালে ট্রাম্প এই হামলা নিয়ে বক্তব্য দেয়। ওই দিন তার কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি ছিল না। এর আগে গত সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে সন্দেহভাজন আইএস হামলার পর পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

Tags

Your Comment

You are replying to: .
captcha